র‌্যাবের অভিযানে রাজধানীর বনানী হতে অবৈধ মাদকসহ পরীমনি ও রাজসহ ০৪ জন গ্রেফতার

Share

খবরের সময় ডেস্ক:

২০১৮সালের র‌্যাবের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় র‌্যাব মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। আমরা গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে মাদক কারবারীদের অপকৌশলগুলো একে একে রুখে দিয়েছি। করোনাকালীন সময়েও আমরা মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছি এবং ভবিষ্যতে“চলো যাই যুদ্ধে,মাদকের বিরুদ্ধে”এ স্লোগানকে সামনে রেখে র‌্যাবের মাদক বিরোধী অভিযাত্রাকে আরো সুসংহত করবে। আমরা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত“জিরো টলারেন্স নীতি”র আলোকে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা বলতে চাই,কেউ আইনের ঊর্দ্ধে নয়,আইন সবার জন্যই সমান। 

গত ০৩ আগস্ট ২০২১ তারিখ রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং তার সহযোগী মোঃ মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান’কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকার গুলশান,বারিধারা ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টি আয়োজনের বেশ কয়েকটি  তথ্য প্রদান করে। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে ।

গত ০৪ আগস্ট ২০২১ তারিখ রাজধানীর বনানী এলাকায় বিকাল হতে রাত পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে শামসুন্নাহার স্মৃতি @ স্মৃতিমনি @ পরীমনি (২৬), পিতা-মৃত মনিরুল ইসলাম, থানা-ভান্ডারিয়া, জেলা-পিরোজপুর এবং মোঃ নজরুল ইসলাম @ রাজ (৩৯),পিতা-মৃত ঈমান উদ্দিন,থানা ও জেলা-গোপালগঞ্জসহ ০৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত অপর সদস্যরা হলো মোঃ আশরাফুল ইসলাম দীপু (২৯) পিতা-মোঃ দেলোয়ার হোসেন,থানা-সিংগাইর,জেলা-মানিকগঞ্জ (পরীমনির ম্যানেজার) এবং মোঃ সবুজ আলী (৩৫),পিতা-মোঃ হুসাইন কবির,থানা-সদর,জেলা-পাবনা (রাজের ম্যানেজার)। উদ্ধার করা হয় একটি মিনি বার পরিচালনার বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ ৩৩ বোতল বিভিন্ন প্রকার বিদেশী মদসহ দেড় শতাধিক ব্যবহৃত বিদেশী মদের বোতল,ইয়াবা ও শিশা সামগ্রী,এলএসডি;আইস ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের হতে চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হয়।

গ্রেফতারকৃত শামসুন্নাহার স্মৃতি @ স্মৃতিমনি @ পরীমনি, পিরোজপুর’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়,পিরোজপুরের কলেজে (এইচএসসি) জীবনে অধ্যায়ণরত অবস্থায় চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। তিনি ২০১৪ সালে চিত্র জগতে অন্তর্ভুক্ত হন। এ পর্যন্ত তিনি ৩০টি সিনেমা এবং ৫/৭টি টিভিসি’তে অভিনয় করছেন। পিরোজপুর হতে ঢাকায় এসে চিত্র জগতে একটি দৃঢ় অবস্থান তৈরীতে গ্রেফতারকৃত মোঃ নজরুল ইসলাম রাজ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে তিনি জানান। 

গ্রেফতারকৃত শামসুন্নাহার স্মৃতি @স্মৃতিমনি @পরীমনি ২০১৬ সাল হতে অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়েন। তার ফ্ল্যাট হতে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি নিয়মিত এ্যালকোহল সেবন করে থাকেন। মাত্রাতিরিক্ত সেবনের চাহিদা মেটানোর লক্ষে বাসায় একটি মিনি বার স্থাপন করেছেন। মিনি বার থাকায় তার ফ্ল্যাটে ঘরোয়া পার্টি আয়োজন পরিপূর্ণতা পেত বলে তিনি জানান। গ্রেফতারকৃত মোঃ নজরুল ইসলাম রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের সরবরাহ করত এবং পার্টিতে অংশগ্রহণ করত বলে গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃত মোঃ নজরুল ইসলাম @ রাজ’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়,সে ১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদ্রাসা হতে দাখিল পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন বলে দাবী করেন। অতঃপর সে বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্য ও ঠিকাদারী কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি শোবিজ জগতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটে। বিভিন্ন সিনেমা/নাটকে তিনি নানান চরিত্রে অভিনয়ের সাথে সাথে নামে বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন। রাজ মাল্টি মিডিয়া নামেও তার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়িক জগত ও চিত্র জগতের দুই ক্ষেত্রে তার সংযোগ থাকায় তিনি অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন। 

গ্রেফতারকৃত মোঃ নজরুল ইসলাম @ রাজ ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং মোঃ মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের সহযোগীতায় ১০/১২ জনের একটি সিন্ডিকেট তৈরী করেন। উক্ত সিন্ডিকেটটি রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিশেষ করে গুলশান,বারিধারা,বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা করে থাকে। উক্ত পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের নিকট হতে সিন্ডিকেট সদস্যরা বিপুল পরিমান অর্থ পেয়ে থাকেন। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করত। এছাড়া সিন্ডিকেটটি বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করত। একইভাবে উচ্চবিত্ত প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায়এ ধরণের পার্টির আয়োজন করা হত। পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে আগত ব্যক্তিদের চাহিদা/পছন্দের গুরুত্ব দিয়ে পার্টি সমূহ আয়োজন করত। গ্রেফতারকৃত মোঃ নজরুল ইসলাম @ রাজ এর  সিন্ডিকেট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপব্যবহার করতেন। সুদুর প্রসারী পরিকল্পনায় তারা অগ্রসর হতেন ও স্বার্থ চরিতার্থ করতেন।গ্রেফতারকৃত মোঃ নজরুল ইসলাম @ রাজ তার “রাজ মাল্টিমিডিয়া”কার্যালয়টি অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হত।

গ্রেফতারকৃত মোঃ নজরুল ইসলাম @ রাজ জানায় এ জাতীয় অবৈধ আয় হতে অর্থ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় আমদানি, ড্রেজার বালু ভরাট ও ঠিকাদারী ও শোবিজ জগতে বিনিয়োগ করেতেন। বর্ণিত ব্যবসায় বেশ কয়েকজন অবৈধ অর্থের যোগানদাতাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছেন। গ্রেফতারকৃতদের ব্যবসায়িক কাঠামোতে অস্বচ্ছতা রয়েছে।